অনিয়মিত শেয়ার বন্টন, ফলাফল, শেয়ার তলব, তলব সংক্রান্ত নিয়মাবলী, শেয়ার বিলি সংক্রান্ত বিধানসমূহ

প্রশ্ন ৪.২২ ৷৷ অনিয়মিত শেয়ার বন্টন বলতে কি বুঝ?
১০৫ (What do you meant by irregular shareallotment?)


উত্তরঃ বাংলাদেশে গৃহীত ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৪১ নং ১৪৮ ধারায় শেয়ার বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিধি-নিষেধ বর্ণিত হয়েছে। শেয়ার বন্টনের ক্ষেত্রে কোম্পানি আইনে বর্ণিত বিধানসমূহ যথাযথভাবে না মেনে শেয়ার বন্টন করলে তা অনিয়মিত শেয়ার বন্টন বলে গণ্য হয়। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রগুলোতে শেয়ার বন্টন অনিয়মিত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে :

কোম্পানির স্মারকলিপি বা পরিমেল নিয়মাবলী দ্বারা নির্দিষ্ট এবং বিবরণপত্র বা বিকল্প বিবরণপত্রে বর্ণিত ন্যূনতম চাঁদা সংগৃহীত না হওয়া সত্ত্বেও শেয়ার বন্টন করলে; 21 শেয়ার আবেদনপত্রের সাথে নগদে পরিশোধ্য অর্থ, প্রতিটি শেয়ারের অভিহিত মূল্যের ন্যূনতম ৫% পরিশোধিত না হওয়া সত্ত্বেও শেয়ার বন্টন করলে; আবেদনকারীদের নিকট থেকে শেয়ার মূল্য বাবদ প্রাপ্ত অর্থ কোম্পানির কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র পাবার পূর্ব পর্যন্ত কোন তফসিল ব্যাংকে জমা না রেখে শেয়ার আবেদনকারীদের নিকট শেয়ার বন্টন করলে; কোম্পানির নিবন্ধকের নিকট বিবরণপত্র বা বিবরণপত্রের বিকল্প বিবৃতির কপি দাখিল না করে শেয়ার বন্টন করলে ।

প্রশ্ন ॥৪.২৩ ৷ অনিয়মিত শেয়ার বন্টনের ফলাফল কি?
(What are the effects of irregular share allotment?)

উত্তর ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৪৯ ধারায় অনিয়মিত শেয়ার বন্টনের ফলাফল বর্ণিত হয়েছে। অনিয়মিত শেয়ার বন্টনের ফলাফল নিম্নরূপ হতে পারে :

অনিয়মিতভাবে কোম্পানি শেয়ার বন্টন করলে আবেদনকারী ইচ্ছা করলে তা বাতিল করে দিতে পারে। অর্থাৎ আবেদনকারীর ইচ্ছানুসারে বন্টনকৃত শেয়ার বাতিলযোগ্য বলে গণ্য হবে ।

অনিয়মিত শেয়ার বন্টনের ফলে কোম্পানি বা বন্টন প্রাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলে এজন্য দায়ী পরিচালক ক্ষতিগ্রস্ত উভয় পক্ষকে ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবেন। তবে শেয়ার বন্টনের দু'বছরের মধ্যে ক্ষতিপূরণের দাবী উত্থাপিত না হলে এ বিধান কার্যকর হবে না।

প্রশ্ন ॥৪.২৪ ৷ শেয়ার তলব বলতে কি বুঝ?
(What do you mean by share call?)

উত্তর সাধারণ অর্থে, শেয়ার তলব বলতে শেয়ারের টাকা পরিশোধের নির্দেশকে বুঝায় । অর্থাৎ কোন কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টিত শেয়ারের অপরিশোধিত মূল্য পরিমেল নিয়মাবলীর নিয়ম অনুসারে কিস্তিতে পরিশোধ করার নির্দেশকে শেয়ার তলব বলে । এ প্রসঙ্গে এম. এইচ, বুখারী বলেন, “কোম্পানি কর্তৃক তার চলমান যে কোন সময়ের প্রতি শেয়ারের উপর বকেয়া সম্পূর্ণ কিংবা আংশিক মূল্য পরোশোধ করার জন্য এর শেয়ারহোল্ডারদের প্রতি যে দাবি করা হয় তাকে শেয়ার তলব বলে।”

যখন কোন কোম্পানি শেয়ার বিক্রয় করবে তখন সে প্রতি শেয়ারের মোট মূল্য এককালীন গ্রহণ করবে নাকি' কিস্তিতে কিস্তিতে গ্রহণ করবে তা সম্পূর্ণরূপে কোম্পানির পরিচালকমণ্ডলীর সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে। তবে এ বিষয়টি অবশ্যই কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলীতে থাকতে হবে। এককালীন মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে আবেদনকারীদেরকে আবেদনের সাথে আবেদনকৃত শেয়ারের পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করতে হয় । অপরদিকে, কিস্তিতে মূল্য আদায়ের ক্ষেত্রে আবেদনের সাথে পূর্ব নির্ধারিত কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয় ।

সুতরাং বলা যায়, যখন কিস্তিতে শেয়ারের মূল্য পরিশোধের নির্দেশ থাকে এবং আদায় করা হয় তখন সেই প্রক্রিয়াকে শেয়ার তলব বলা হয় ।

প্ৰশ্ন ॥৪.২৫ ৷৷ শেয়ার তলব সংক্রান্ত নিয়মাবলী আলোচনা কর ।
(Discuss the rules regarding share call.)

উত্তর কোন কোম্পানি কর্তৃক শেয়ারহোল্ডারদের মধ্যে বণ্টিত শেয়ারের অপরিশোধিত মূল্য পরিমেল নিয়মাবলীর নিয়ম অনুসারে কিস্তিতে পরিশোধ করার নির্দেশকে শেয়ার তলব বলে ।

কোম্পানি কর্তৃক এই শেয়ার তলব সম্পর্কিত নিয়মাবলী নিম্নে আলোচনা করা হলোঁ :-

১। পরিমেল নিয়মাবলী ও বিবরণপত্র অনুসরণ : শেয়ার তলব সংক্রান্ত নিয়মাবলীঅবশ্যই কোম্পানির পরিমেল নিয়মাবলী এবং বিবরণপত্রে উল্লেখিত নিয়ম অনুসারে হতে হবে । তবে এরূপ ব্যতিক্রম সাধারণ মানের হলে তার জন্য তলব অবৈধ হবে না।

২। তলবের সময় ও অর্থের পরিমাণ : পরিচালকগণ সময় সময় সদস্যদের শেয়ারের অপরিশোধিত মূল্য তলব করতে পারবেন। তবে উক্ত শেয়ারের নামিক মূল্যের এক-চতুর্থাংশের অধিক মূল্য তলব করা যাবে না অথবা সর্বশেষ তলবের অন্যূন এক মাসের মধ্যে তা পরিশোধযোগ্য হবে না এবং প্রত্যেক সদস্য তার শেয়ারের উপর তলবকৃত মূল্য ১৪ দিনের একটি নোটিশ প্রাপ্তি সাপেক্ষে নির্ধারিত সময়ে কোম্পানিকে পরিশোধ করতে বাধ্য থাকবেন। [তফসিল-১, ধারা-১২]

৩। স্পষ্টীকৃত নোটিশ : শেয়ার তলব জারি হওয়ার পর শেয়ারহোল্ডারগণ কবে, কোথায়, কি পরিমাণ অর্থ জমা দিবে তা অবশ্যই নোটিশে উল্লেখ থাকতে হবে। মৌখিক বিজ্ঞপ্তি আইনগতভাবে গ্রহণযোগ্য নয় ।

৪। অপরিশোধিত তলবের সুদ আদায় : শেয়ার তলবের অর্থ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা না হলে পরিমেল নিয়মাবলীতে উল্লেখিত পরিমান সুদ শেয়ারহোল্ডারদের কাছ তেকে আদায় করা যাবে ।

৫। পরিমেল নিয়মাবলীর অক্ষমতা : পরিমেল নিয়মাবলী দ্বারা ক্ষমতাপ্রাপ্ত না হলে একই শ্রেণীভুক্ত শুধুমাত্র কতিপয় শেয়ারহোল্ডারদের কাছ থেকে শেয়ার তলবের অর্থ আদায় করা যায় না ।

৬। মামলা করে অর্থ আদায় : কোন শেয়ারহোল্ডার শেয়ারের তলবকৃত অর্থ প্রদানে ব্যর্থ হলে, তার বিরুদ্ধে মামলা করে উক্ত অর্থ আদায় করা যাবে।

৭। শেয়ার বাজেয়াপ্তকরণ : কোন শেয়ারহোল্ডার তলবকৃত অর্থ যথাসময়ে পরিশোধ না করলে, কোম্পানি তৎকর্তৃক ধারণকৃত শেয়ার বাজেয়াপ্ত করতে পারে।

৮। তলবের পার্থক্য ঃ কোম্পানি কর্তৃক শেয়ার তলবের কোন কিস্তির অর্থের পরিমাণ শেয়ারের আঙ্কিক মূল্যের এক-চতুর্থাংশের অধিক হতে পারবে না এবং দু'টি তলবের মাঝে সময়ের পার্থক্যও অন্ততপক্ষে এক মাস হবে। [তফসিল-১, ধারা-১২]

৯ । অগ্রিম তলব : পরিমেল নিয়মাবলীর বিধান সাপেক্ষে পরিশোধিত শেয়ার তলবের অর্থ অগ্রিম গ্রহণ করা যেতে পারে। এটা অতলবী অর্থের সম্পূর্ণতা হতে পারে আবার আংশিকও হতে পারে । শেয়ারহোল্ডার এবং পরিচালকদের সমঝোতা অনুযায়ী উক্ত অর্থের উপর সর্বোচ্চ ৬% হারে সুদ প্রদান করা যাবে। [তফসিল-১, ধারা-১৭]

১০। যৌথ শেয়ারহোল্ডারদের ক্ষেত্রে দায় : যে ক্ষেত্রে শেয়ারের যৌথ মালিক বিদ্যমান সেক্ষেত্রে শেয়ার তলবী অর্থ প্রদানের জন্য তারা একক বা যৌথভাবে বাধ্য থাকে ।

১১। অর্থ প্রদানে অসম্মতিতে বাধা ঃ বিবরণপত্রে মিথ্যে বিবৃতির অভিযোগে কোন শেয়ারহোল্ডার শেয়ার তলবের অর্থ প্রদানে অস্বীকৃতি জানাতে পারে না। অবশ্য সে যদি সদস্য তালিকা থেকে তার নাম প্রত্যাহারের পদক্ষেপ নেয় তবে এ বিধি কার্যকরী হবে না ।

প্ৰশ্ন ৷৪.২৬ ॥ অধিহারে শেয়ার বিলি সংক্রান্ত বিধানসমূহ আলোচনা কর।
(Discuss the rules regarding issue of share at a premium.)

ত্তর ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ৫৭ ধারায় অধিহারে শেয়ার বিলি সংক্রান্ত বিধি-বিধান বর্ণিত হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

১। শেয়ার অধিহার হিসাব সৃষ্টি : নগদে বা অন্য কোনভাবে কোম্পানি অধিহারে শেয়ার বিলি করলে উক্ত কোম্পানি অধিহার হিসাবের সমুদয় জের “শেয়ার অধিহার হিসাব” নামের একটি হিসাবে স্থানান্তর করবে এবং এরূপ হিসাব অত্র ধারার বিধান সাপেক্ষে কোম্পানি পরিশোধিত মূলধনের অনুরূপ বিবেচিত হবে। [ধারা- ৫৭(১)]

২। শেয়ার অধিহার হিসাবের অর্থ ব্যবহার : কোম্পানি আইনের ৫৭(২) ধারা অনুযায়ী কোন কোম্পানি অধিহারে শেয়ার বিলি করলে তার শেয়ার অধিহারের অর্থ নিম্নে বর্ণিত উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবে :

(ক) কোম্পানির যে সকল অবিলিকৃত শেয়ার কোম্পানির সদস্যগণকে পূর্ণ পরিশোধিত বোনাস শেয়ার হিসেবে বিলি করা হবে সেই সকল শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করা;

(খ) কোম্পানির প্রাথমিক খরচ অবলোপন করা;

(গ) কোম্পানির যে কোন শেয়ার বা ঋণ বিলির উপর কৃত ব্যয়, প্রদত্ত কমিশন মঞ্জুরকৃত বাট্টা অবলোপন করা; এবং

(ঘ) কোম্পানির কোন অগ্রাধিকার শেয়ার বা ঋণপত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য প্রদেয় অধিহারের অর্থের ব্যবস্থা করা।

৩। আইন প্রবর্তনের পূর্বে প্রাপ্ত অধিহারের ক্ষেত্রে বিধান ঃ কোন কোম্পানি অ আইন প্রবর্তনের পূর্বে অধিহারে শেয়ার বিলি করে থাকলে উক্ত শেয়ারের ক্ষেত্রে এই ধারার নিয়মাবলী এরূপে প্রযোজ্য হবে যেন উক্ত শেয়ার অত্র আইন প্রবর্তনের পরে বিলি করা হয়েছে । তবে শর্ত হলো অধিহারের কোন অংশ যদি এরূপভাবে প্রয়োগ করা হয়ে থাকে যে, তাকে তফসিল ১১-তে বিধৃত অর্থে কোম্পানির সঞ্চিতি তহবিলের অংশ বলে শনাক্ত করা সম্ভব নয় সেক্ষেত্রে শেয়ার অধিহার হিসাবে অন্তর্ভুক্তিযোগ্য অর্থ নির্ধারণ করার সময় উক্ত অংশকে অগ্রাহ্য করা হবে। [ধারা-৫৭(৩)]

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url