শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের পদ্ধতি আলোচনা

প্রশ্ন॥ শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের পদ্ধতি আলোচনা কর।

(Discuss the procedure of share allotment.)

উত্তর শেয়ারের মূল্য কতটা এবং কিভাবে আদায় করা হবে তার ভিত্তিতে শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের বিভিন্ন পদ্ধতি গড়ে উঠেছে। নিম্নে শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের পদ্ধতিগুলো আলোচনা করা হলো :

(ক) শেয়ারের মূল্য নিরূপণের ভিত্তিতেঃ শেয়ার মূল্যমান বা নামিক মূল্য কি হবে তা কোম্পানির স্মারকলিপিতে উল্লেখ থাকে। তাই এই মূল্যমান কম বা বেশি করার কোন সাধারণ সুযোগ থাকে না। তবে পরিচালকগণ অবস্থা বিবেচনায় সিদ্ধান্ত নিয়ে এই মূল্যমানের চেয়ে বেশি বা কমমূল্যে তা বিক্রয় করতে পারে। তাই শেয়ারের মূল্য কতটা নির্ধারণ ও আদায় করা হবে তার ভিত্তিতে নিম্নোক্ত তিনভাবে শেয়ার বিলি করা যায় :

১। সমহারে বা আংকিক মূল্যে শেয়ার বিলি : শেয়ারের যে মূল্যমান স্মারকলিপিতে নির্দিষ্ট করে কোম্পানি নিবন্ধিত হয় তাকেই েেশয়ারের আংকিক মূল্য বা নামিক মূল্য বলে। কোম্পানি ঐ মূল্যমানে শেয়ার বিলি বা বিক্রয় করলে তাকে সমহারে বা আংকিক মূল্যে শেয়ার বিলি বলে। এক্ষেত্রে আবেদনের প্রেক্ষিতে বরাদ্দকৃত সকল শেয়ার থেকে প্রাপ্ত অর্থ শেয়ার মূল্যধনের বিপক্ষে ক্রেডিট করা হয়ে থাকে।

২। অধিহারে শেয়ার বিলি : কোন কোম্পানি তার শেয়ারের প্রকৃত বা আংকিক মূল্য অপেক্ষা বেশি মূল্যে শেয়ার বিক্রয় করলে তাকে অধিহারে শেয়ার বিলি বলে। শেয়ার অধিহার হিসাবের অর্থ বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হতে পারে। তবে এ হিসাবে যদি কোন অর্থ জমা থাকে তবে তা অত্র আইনের ও ধারার বিধান সাপেক্ষে কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের অনুরূপ বিবেচিত হয়ে থাকে। [ধারা ৫৭(১)]

৩। অবহারে বা হ্রাসকৃত মূল্যে শেয়ার বিলি : যখন শেয়ারের আংকিক মূল্য অপেক্ষা কমদানে কোম্পানি শেয়ার বিলি বা বিক্রয় করে তখন তাকে অধহারে বা হ্রাসকৃত মূল্যে শেয়ার বিলি করে। সাধারণত বাজেয়াপ্ত বা সমর্পিত শেয়ার ছাড়া অন্য কোন শেয়ার কোম্পানি অবহারে বিলি করতে পারে না। [Oregun Gold Mining Co. of India Ltd. VS. Poper (1892)]। বাজেয়াপ্ত বা সমর্পিত শেয়ারের ক্ষেত্রে কোম্পানির যে লাভ হয় তা মূলধন সঞ্চিতি হিসাবে দেখানো হয় । ফলে পুনঃবিলিতে কোন ক্ষতি হলে তা ঐ হিসাব থেকে পূরণ করা হয়। শেয়ার মূলধন হিসাবকে তার আংকিক মূল্যের জন্যই ক্রেডিট করা হয় ।

(খ) শেয়ারের মূল্য সংগ্রহের ভিত্তিতেঃ শেয়ারের মূল্য সংগ্রহ কৌশলের ভিত্তিতে নিম্নোক্তভাবে বিলি করা হতে পারে ঃ

১। একক কিস্তিতে শেয়ার বিলি : কোম্পানি বিবরণপত্র প্রচার করে বা না করে

শেয়ার আবেদনের সাথে একবারে শেয়ারের পূর্ণমূল্য, শেয়ারের আংকিক মূল্যে অথবা অধিহারে বা অবহারে আদায় করলে তাকে এক কিস্তিতে শেয়ার বিলি বলে । আমাদের দেশে সাধারণত এক কিস্তিতেই শেয়ার মূল্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে ।

২। একাধিক কিস্তিতে শেয়ার বিলি : কোম্পানির পরিচালক পর্ষদ ইচ্ছে করলে শেয়ারের মূল্য একাধিক কিস্তিতে আদায় করতে পারে। তবে সেক্ষেত্রে শর্ত হলো এই যে, কোন কিস্তির পরিমাণ এর নামিক মূল্যের শতকরা ৫ ভাগের কম হতে পারবে না। [ধারা-১৪৮(৬)]

(গ) প্রস্তাবের ধরণ বিচারে ঃ কোম্পানি তার শেয়ার বিক্রয়ের নিমিত্তে কাদেরকে প্রস্তাব দেবে বা কারা শেয়ার ক্রয়ের সুবিধা পাবে-এ ভিত্তিতে শেয়ার বিলিকে নিম্নোক্ত দু'ভাগে ভাগ করা হয় :

১। সাধারণ বিলি : কোম্পানি বিবরণপত্রের মাধ্যমে জনসাধারণের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয়ের আবহ্বান জানালে এবং সে অনুযায়ী যোগ্যতাসম্পন্ন আবেদনকারীদের বাছাই করে তাদের মধ্যে শেয়ার বিলি করলে তাকে সাধারণ বিলি বলে। কোম্পানি বিবরণপত্র প্রচার না করে উদ্যোক্তাদের মধ্যেও সমঝোতার বিলিতে শেয়ার বিলি করতে পারে । সেটিও এক হিসেবে সাধারণ বিলি গণ্য হয় ।

২। অধিকারযোগ্য বিলি : কোম্পানি সাধারণ জনগণকে শেয়ার ক্রয়ের আহ্বান না জানিয়ে যদি বর্তমান শেয়ারমালিকদেরকে তাদের ক্রয়কৃত শেয়ার অনুপাতে নতুন শেয়ার ক্রয়ের সুযোগ প্রদান করে তবে তাকে অধিকারযোগ্য বিলি বলা হয় ।

(ঘ) মূল্য পরিশোধের ধরণ ভিত্তিতে : শেয়ারের মূল্য কিভাবে পরিশোধিত হবে তার ভিত্তিতে শেয়ার বিলি নিম্নোক্ত দু'ধরণের হতে পারে :

১। নগদ বিলি : শেয়ারের মূল্য নগদে প্রাপ্ত হয়ে শেয়ার বিলি করা হলে তাকে নগদ বিলি বলে । সাধারণভাবে শেয়ারের অর্থ নগদেই পাওয়া যায় ।

২। অন্যভাবে বিলি : নগদে শেয়ার বিলি না করে কোম্পানি তার পরিমেল নিয়মাবলী অনুসারে অন্য কোম্পানির সম্পত্তি বা সেবা প্রাপ্তির বিনিময়েও শেয়ার বিলি করতে পারে । এরূপ শেয়ার বিলি নিম্নোক্ত দু'ভাবে হতে পারে :

(i) সম্পত্তি প্রাপ্তির বিনিময়ে বিলি : কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানির পক্ষ সম্পত্তি ক্রয় করে তার মূল্য পরিশোধ বাবদ শেয়ার বিলি করা যায়। তবে এর পক্ষে পরিচালক পর্ষদের যথাযথ অনুমোদন থাকা প্রয়োজন ।

(ii) পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বিলি : কোম্পানি নিবন্ধনের পূর্বে কোম্পানি গঠন কাজ সম্পাদনের জন্য সম্মানী হিসেবে কোম্পানি আইনের আওতায় এর উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিলি করা যেতে পারে। এজন্য সাধারণত প্রবর্তকদের শেয়ার বিলি করা হয়ে থাকে ।

প্রশ্ন৷৪.২১ ৷৷ শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের উপর আরোপিত বাধা-নিষেধসমূহ লিখ । (Write down the restrictions of the share allotment.)

উত্তর ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইনের ১৪৮ ধারায় পাবলিক লিমিটেড কোম্পানির শেয়ার বিলি বা আবণ্টনের উপর যে সকল বাধা-নিষেধের উল্লেখ হয়েছে তা নিম্নে আলোচনা করা হলো :

১। ন্যূনতম মূলধন সংগ্রহ সাপেক্ষে বণ্টন : কোন কোম্পানি তার বিবরণপত্রে উল্লেখ ন্যূনতম মূলধন পরিমাণ অর্থ নগদে আদায় না হলে কোন শেয়ার বিলি বা বণ্টন করতে পারবে না। উল্লেখ্য এরূপ ন্যূনতম মূলধন পরিমাণ অর্থ অবশ্যই শেয়ার বিক্রয় বাবদ অর্থ থেকে সংগ্রহীত হতে হবে। [ধারা- ১৪৮(১)]

২। তালিকাভুক্ত ব্যাংকে অর্থ সংরক্ষণ : শেয়ার আবেদনকারীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত

অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক আদেশ- ১৯৭২ অনুযায়ী দেশের কোন তালিকাভুক্ত ব্যাংকে জমা রাখতে হবে। কোম্পানির কার্যারম্ভের অনুমতিপত্র না পাওয়া পর্যন্ত এ অর্থ অন্যত্র সরানো যাবে না। [ধারা- ১৪৮(৪)] এরূপ বিধি ভঙ্গের জন্য প্রত্যেক উদ্যোক্তা বা পরিচালক কমপক্ষে ৫,০০০ টাকা অর্থদণ্ডে দায়ী হবেন। [ধারা- ১৪৮ (৫)]

৩। শেয়ার আবেদনে ন্যূনতম অর্থের পরিমাণ : কিস্তিতে অর্থ আদায়ের ক্ষেত্রে শেয়ার আবেদনের সাথে সম্পৃক্ত অর্থের পরিমাণ কখনই শেয়ারের নামিক মূল্যের শতকরা ৫ ভাগের কম হতে পারবে না [ধারা-১৪৮ (৬)]

৪। অগ্রহণীয় আবেদনপত্রের অর্থ ফেরত : বিবরণপত্র প্রথম ইস্যু হওয়ার তারিখ থেকে অনধিক ১৮০ দিন অথবা উভয়ের মধ্যে যেটি পূর্বে হয় তার মধ্যে অগ্রহণীয় আবেদনপত্রের অর্থ আবেনদকারীদের ফেরত দিতে হবে। উক্ত সময়ের মধ্যে কোম্পানি অর্থ ফেরৎ না দিলে উক্ত সময় অতিবাহিত হওয়ার পর হতে ব্যাংক হারের উর্দ্ধে ৫% হারে সুদসহ অর্থ পরিশোধে কোম্পানির পরিচালকগণ এককভাবে বা যৌথভাবে দায়ী হবেন। [ধারা- ১৪৮ (৭)

৫। শেয়ার বণ্টন শুরুর সময়কাল : বিবরণপত্র সাধারণভাবে প্রথম ইস্যু হওয়ার পর হতে ৮ম দিন আরম্ভ না হওয়া পর্যন্ত কিংবা বিবরণপত্রে এজন্য কোন সময় উল্লেখ করা হলে ঐ সময়ের পূর্বে কোন শেয়ার বা ঋণপত্র বণ্টন করা যাবে না বা তদানুসারে দাখিলকৃত আবেদনের উপর কোন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না। উল্লেখ্য, বিবরণপত্র ইস্যুর দায়ী পক্ষ যদি বিবরণপত্র প্রকাশের পর তাদের দায়ের পরিবর্তনের জন্য কোন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তবে তা প্রকাশের ৮ম দিন আরম্ভ না হওয়া পর্যন্ত কোন শেয়ার বা ঋণপত্র বণ্টন করা যাবে না ।

৬। আবেদনপত্র প্রত্যাহারের সময়কাল : ইস্যুকৃত বিবরণপত্র অনুসারে কোম্পানির শেয়ার বা ঋণপত্রের জন্য আবেদন করা হলে, চাঁদা তালিকা খোলার পর ৮ম দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত অথবা উপধারা ৮-এ বর্ণিত দায় পরিবর্তনকারী বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরবর্তী ক্ষেত্রে উক্ত প্রকাশের পর ৮ম দিন অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত শেয়ার বা ঋণপত্রের আবেদন প্রত্যাহার করা যাবে না। [ধারা- ১৪৮ (৯)]

৭। পুনঃবণ্টনের ক্ষেত্রে বিধান : চাঁদা বা অর্থ জমাদানের জন্য প্রথমবার জনসাধারণের নিকট প্রস্তাব দেয়া হয়েছে এমন শেয়ার বণ্টনের পর পরবর্তী সময়ে এর কোন অংশের পুনঃবণ্টনের ক্ষেত্রে এই ধারার ৬ উপধারা ব্যতীত অন্য কোন বিধান প্রযোজ্য হবে না। (ধারা-১৪৮(১১)]

৮। জনগণ বরাবর আমন্ত্রণ ব্যতিরেকে শেয়ার বণ্টনের ক্ষেত্রে বিধান : কোম্পানি আইনের ১৪৮(১২)' অনুসারে, যেক্ষেত্রে কোন কোম্পানি বিবরণপত্র জনসমক্ষে প্রচার ও শেয়ার ক্রয়ের আহ্বান ব্যতিরেকে নগদ অর্থের বিনিময়ে প্রথমবার তার শেয়ার বণ্টনের কার্যক্রম গ্রহণ করে সেক্ষেত্রে নিম্নোক্তভাবে ন্যূনতম চাঁদা হিসাব করা হবে এবং তা আদায় না হলে শেয়ার বণ্টন করা যাবে না :

(ক) এমন পরিমাণ অর্থ যা স্মারকলিপি বা পরিমেল নিয়মাবলীতে ন্যূনতম চাঁদা হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে এবং যা পাওয়া গেলে শেয়ার বণ্টন করা হবে বলে বিবরণপত্রের বিকল্প বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং

(খ) ন্যূনতম চাঁদার পরিমাণ উপরোক্তভাবে উল্লেখ না থাকলে শেয়ার মূলধনের যে অংশ নগদ ব্যতীত অন্য কোনভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ পরিশোধিত হিসেবে ইস্যু করা হয়েছে বা অনুরূপ ইস্যু করতে কোম্পানি সম্মত হয়েছে সেই অংশ বাদে বাকি শেয়ার মূলধনের সম্পূর্ণ পরিমাণ অর্থ পাওয়ার অঙ্গীকার পাওয়া না গেলে এবং নগদে প্রদেয় প্রতিটি শেয়ারের নামিক মূল্যের শতকরা ৫ ভাগ পরিমাণ অর্থ আদায় না হলে ।

৯। বিবরণপত্র বা বিবরণপত্রের বিকল্প বিবৃতি নিবন্ধন ব্যতিরেকে শেয়ার আবন্টনে বাধা ঃ যেক্ষেত্রে শেয়ার মূলধন বিশিষ্ট কোন পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি-এর গঠনকালে কোন বিবরণপত্র ইস্যু করেনি বা যেক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানি বিবরণপত্র ইস্যু করা সত্ত্বেও উক্ত বিবরণপত্র ছাড়া যে সকল শেয়ার বা ঋণপত্রের চাঁদা প্রদানের জন্য জনসাধারণকে আহ্বান জানানো হয়েছিল কিন্তু সে সকল শেয়ার বা ঋণপত্র বণ্টন করা হয় নি সেক্ষেত্রে উক্ত কোম্পানি প্রথম শেয়ার আবণ্টনের কমপক্ষে তিনদিন পূর্বে যদি নিবন্ধকের নিকট নিবন্ধনের জন্য বিবরণপত্রের বিকল্প বিবৃতি জমা দিয়ে না থাকে তবে শেয়ার বণ্টন করতে পারবে না। [ধারা- ১৪১ (১))

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url